Some Important Website

বাংলা প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট সমুহ

Sunday, July 31, 2016

৯।ঢাকার ইতিহাস

ঢাকার ইতিহাস
ঢাকার নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কথিত আছে যে, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ঐ এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওযা গিয়েছিল, তাই রাজা মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে।

আবার অনেক ঐতিহাসিকের মতে, মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন; তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ শহরে ঢাক বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ঢাক বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্তির রূপ নেয় এবং তা থেকেই শহরের নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে।

ধারণা করা হয় কালের পরিক্রমায় ঢাকা প্রথমে সমতট, পরে বঙ্গ ও গৌড় প্রভৃতি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দীর শেষের দিকে মুসলমানেরা ঢাকা অধিকার করে। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের ফরমান অনুযায়ী ১৬ জুলাই, ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকাকে সুবে বাংলার রাজধানী ঘোষণা করা হয় । সম্রাট জাহাঙ্গীর-এর নাম অনুসারে রাজধানীর নাম জাহাঙ্গীরনগর রাখা হয় । সম্রাট জাহাঙ্গীরের জীবতকাল পর্যন্ত এ নাম বজায় ছিলো ।

এর আগে সম্রাট আকবরের আমলে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার প্রাদেশিক রাজধানী ছিলো বিহারের রাজমহল। সুবা বাংলায় তখন চলছিলো মোঘলবিরোধী স্বাধীন বারো ভূইঁয়াদের রাজত্ব। বারো ভূইয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে বাংলাকে করতলগত করতে ১৫৭৬ থেকে ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বারবার চেষ্টা চালানো হয়। এরপর সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম খান চিশতীকে রাজমহলের সুবেদার নিযুক্ত করেন। তিনি ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে রাজধানী রাজমহল থেকে সরিয়ে ঢাকায় স্থানান্তর করেন।

সুবেদার ইসলাম খান চিশতী দায়িত্ব নেবার মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে বারো ভূইয়ার পতন ঘটে ও বর্তমান চট্টগ্রামের কিছু অংশ বাদে পুরো সুবে বাংলা মোগল সাম্রাজ্যের অধীনে আসে।

১৬১০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা সুবা বাংলার রাজধানী হলেও সুবা বাংলার রাজধানী বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে। ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার শাহ সুজা রাজধানী আবার রাজমহলে স্থানান্তর করেছিলেন। শাহ সুজা'র পতনের পর ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার মীর জুমলা আবার রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। এরপর বেশ কিছুকাল ঢাকা নির্বিঘ্নে রাজধানীর মর্যাদা ভোগ করার পর ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার মুর্শিদ কুলি খান রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন। এরপর ঢাকায় মোঘল শাসনামলে চলতো নায়েবে নাজিমদের শাসন। ব্রিটিশ শাসনের আগে পর্যন্ত এভাবেই চলছিলো। ব্রিটিশরা রাজধানী হিসেবে কলকাতাকে নির্বাচিত করলে ঢাকার গুরুত্ব আবারো কমতে থাকে। এরপর দীর্ঘকাল পর ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা আবার তার গুরুত্ব ফিরে পায়। বঙ্গভঙ্গের পর ১৯০৫ সালে ঢাকাকে আসামও বাংলার রাজধানী করা হয়। কংগ্রেসের বাধার মুখে ব্রিটিশ রাজ আবার ১৯১১ সালে রাজধানী কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকা নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের রাজধানী হয়। তবে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহৃত হলে ঢাকা তার প্রাদেশিক রাজধানীর মর্যাদাটি হারায়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক রাজধানীতে পরিণত হয়। পরে ১৯৭১ সালে ঢাকা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজধানী ঘোষিত হয়।
ঢাকার নামকরণ সংক্রান্ত আরও কিছু ঘটনার কথা লোকমুখে শোনা যায়। সেগুলো হলো
১। একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর ঢাক গাছ (বুটি ফুডোসা) ছিল;
২। ঢাকাভাষা নামে একটি প্রাকৃত ভাষা এখানে প্রচলিত ছিল;
৩। রাজতরঙ্গিণী-তে ঢাক্কা শব্দটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে অথবা এলাহাবাদ শিলালিপিতে উল্লেখিত সমুদ্রগুপ্তের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ডবাকই হলো ঢাকা।

ভৌগোলিক অবস্থানঃ
২৩·৪২ থেকে ২৩·৫৪ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০·২০ থেকে ৯০·২৮ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। ঢাকার চারদিক নদীপথ দ্বারা বেষ্টিত। ঢাকার উত্তরে রয়েছে টঙ্গী খাল, দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদী, পূর্বে বালু নদী এবং পশ্চিমে রয়েছে তুরাগ নদী। ভৌগোলিক অবস্থানে ঢাকা মোটামুটিভাবে বাংলাদেশের মাঝখানে অবস্থিত। আয়তন ৩৬০ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। আবহাওয়া মূলত ক্রান্তিয় অঞ্চলের। বছরের বেশির ভাগ সময়েই উজ্জ্বল সূর্যকিরণ, প্রচণ্ড গরম আর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। নভেম্বর হতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকালের সময়টা বেশ চমৎকার ও সহনীয়। বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২৫৪০ মিলি মিটার। বাতাসের আর্দ্রতা আনুমানিক ৮০ শতাংশ।

জনগোষ্ঠী:

ঢাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহর যা বাঙালি সংস্কৃতির একটি ছবিও বলা চলে। ঢাকায় বসবাসকারীদের কিছু অংশের পূর্বপুরুষরা ভারতীয়। তারা অনেকেই ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাগের সময় ভারত থেকে এসেছিলেন। এদের মধ্যে কিছু বিহারী মুসলমানও ছিলেন। এদের সংখ্যা বর্তমানে কয়েক লক্ষ। এখানকার বেশিরভাগ লোক মুসলমান সম্প্রদায়ের। কিন্তু সাথে বহু হিন্দু, খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করেন। ঢাকায় বসবাসকারী প্রায় সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলেন, তবে কিছু লোক ইংরেজি ভাষা এবং উর্দু ভাষা বুঝতে ও বলতে পারে। বর্তমানে নতুন প্রজন্মের অনেকেই হিন্দী ভাষা রপ্ত করতে শুরু করেছে। ঢাকা শহরে অনেকগুলো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে যারা ইংরেজি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। ঢাকার বাসিন্দাদের কিছু অংশ খুব শিক্ষিত এবং আধুনিক।

পুরনো ঢাকার আধিবাসীদের মধ্যে যারা খুবই পুরোন তাদের কুট্টি বলা হয়, তাদের আলাদা উপভাষা এবং সংস্কৃতি রয়েছে। ঢাকা রাজধানী হওয়ায় সারা বাংলাদেশ থেকেই এখানে লোকজন উন্নত জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে আসে।
 
সংস্কৃতি:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযকে মূল ধরে তার পার্শ্ববর্তী এলাকা হচ্ছে ঢাকা শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী, চারুকলা ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় গণ গ্রন্থাগার ও জাতীয় জাদুঘর এলাকা সংস্কৃতি-কর্মীদের চর্চা ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর মূল ক্ষেত্র। এর বাইরে বেইলি রোডকে নাটকপাড়া বলা হয় সেখানকার নাট্যমঞ্চগুলোর জন্য। এছাড়াও নবনির্মিত শিল্পকলা একাডেমীর এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল এবং অন্যান্য মঞ্চসমূহ নাট্য ও সঙ্গীত উৎসবে সব সময়ই সাংস্কৃতিক চর্চাকে অব্যাহত ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় বছরের বিভিন্ন সময়ে নাট্যোৎসব ও সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের পুরোটা জুড়ে বাংলা একাডেমিতে একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়। বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে পহেলা বৈশাখে রমনা পার্কে ছায়ানটের অনুষ্ঠানসহ সারাদিন গোটা অঞ্চলে সাংস্কৃতিক উৎসব চলে। সাংস্কৃতিক হৃদ্যতার ধারাবাহিকতায় সেগুনবাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও সারা বছর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে।
 
ঢাকার পরিধি:
ঢাকা শহরটি মোট ১৩০টি ওয়ার্ড ও ৭২৫টি মহল্লায় বিভক্ত। ঢাকা জেলার আয়তন ১৪৬৩.৬০ বর্গ কিলোমিটার (৫৬৫ বর্গমাইল)। এই জেলাটি গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা দ্বারা বেষ্টিত। ক্রান্তীয় বৃক্ষ, আর্দ্র মৃত্তিকা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে সমান সমতলভূমি এই জেলার বৈশিষ্ট্য। এই কারণে বর্ষাকালে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ঢাকা জেলায় প্রায়শই বন্যা দেখা যায়।

স্থানীয় সরকারঃ
২০১২ সালের পূর্ব অবধি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডি.সি.সি) নামের একটি স্ব-শাসিত সংস্থা দ্বারা ঢাকা শহর পরিচালিত হতো। বর্তমানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (দক্ষিণ) এই দুই অংশে এই সংস্থাটি বিভক্ত করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ এর কার্যালয়টি গুলিস্তানে পূর্ববর্তী ঢাকা নগর ভবনে এবং ঢাকা উত্তরের কার্যালয়টি বনানী কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থিত। ঢাকা দক্ষিণ এর ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে পূর্ববর্তী ওয়ার্ড নং ২৪-৩৬ নং ওয়ার্ড এবং ৪৮-৯২ নং ওয়ার্ড পর্যন্ত। বর্তমানে ওয়ার্ডগুলোর নম্বর এরকম যেমন বর্তমান ওয়ার্ড নং ১ (সাবেক ২৪) এভাবে ক্রমানুসারে। আর ঢাকা উত্তরের ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে পূর্ববর্তী ওয়ার্ড নং ১-২৩ নং ওয়ার্ড এবং ৩৭-৪৭, ৫৪, ৫৫ নং ওয়ার্ড নিয়ে এই অংশটি গঠিত। উত্তর ও দক্ষিণ উভয় অংশে আলাদা সংরক্ষিত মহিলা আসনও রয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (দক্ষিণ) অংশে ১৯টি এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশেন (উত্তর) অংশে ১২টি সংরক্ষিত মহিলা আসন রয়েছে। প্রতি তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে একটি করে সংরক্ষিত মহিলা আসন গঠিত।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বাংলাদেশ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সরকারি সংস্থা। এই প্রতিষ্ঠানটি রাজধানী ঢাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে থাকে।
পূর্বনাম: ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি)।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ নামের স্ব-শাসিত দুটি সংস্থা ঢাকা শহরের পরিচালনের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এই শহর ৯০টি প্রশাসনিক ওয়ার্ডে বিভক্ত এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন কমিশনার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন। প্রতি ৫ বছর পরপর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে একজন মেয়র নির্বাচন করা হয়, যিনি প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী প্রধান হিসাবে কাজ করেন। ওয়ার্ড কমিশনারও ৫ বছরের জন্য সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হোন। এছাড়াও মহিলাদের জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ৩০টি সংরক্ষিত কমিশনার পদ রয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ
স্বাধীনতার পর ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ১৯৭৬ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতে ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তা ঢাকা মহানরগর পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও এখন অতিরিক্ত ইন্সপেক্টর জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন। রমনার ২৭, পার্ক এভিনিউ-এ এর সদর দফতর অবস্থিত। ২০১০ সালের ৬ই জুন এর নতুন প্রশাসনিক ভবন উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে ৪৯টি থানার মাধ্যমে ঢাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।


Share this article :

0 comments :

Contact Form

Name

Email *

Message *

 

About Author

Recent Comments